শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

পাখির বাসা ভাড়া ৩ লাখ টাকায়!

পাখির বাসা ভাড়া ৩ লাখ টাকায়!

স্বদেশ ডেস্ক:

বর্ষার শেষে শামুকখোল পাখিরা বাচ্চা ফোটানোর আগে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের খোর্দ্দবাউসা গ্রামের আমবাগানে বাসা বাঁধে। গত বছর অক্টোবরের শেষে পাখিরা বাচ্চা ফুটিয়েছিল, কিন্তু তারা উড়তে শেখার আগেই বাগানের পরিচর্যা করতে চান ইজারাদার। ভেঙে ফেলতে চান পাখিদের সেই বাসা। এমনকি একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙেও দেন। এগিয়ে আসেন স্থানীয় পাখিপ্রেমী কিছু মানুষ। বাসা না ভাঙার জন্য অনুরোধ জানালে বাগান মালিক তখন পাখিদের বাসা ছাড়ার জন্য ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন। ১৫ দিনের মধ্যে বাসা না ছাড়লে পাখিদের বাসা ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেন। তারপর পানি গড়ায় অনেক দূর।

খোর্দ্দবাউসা গ্রামে পাখির বাসার জন্য এবার মোট ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ইজারা বাবদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দীপক কুমার চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত একটি পত্রে জানানো হয়, বন অধিদপ্তরের অনুন্নয়ন খাত থেকে মোট পাঁচজন বাগান মালিক এ অর্থ পাবেন। তারা হলেন- খোর্দ্দবাউসা গ্রামের মঞ্জুর রহমান, সানার উদ্দিন, সাহাদত হোসেন, শফিকুল ইসলাম ও ফারুক আনোয়ার।

এদিকে শনিবার সকালে এ আমবাগান পরিদর্শন করে পাখির অবস্থা দেখতে আসেন বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল ঢাকার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দে, রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জিল্লুর রহমান, রাজশাহী সামাজিক বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক মেহেদী হাসান, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা রাহাত হোসেন, ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জার হেলিম রায়হান ও বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর। এ সময় তারা বাগান মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

স্থানীয়রা জানান, ১৫ দিনের মধ্যে পাখিদের বাগান ছাড়ার বিষয়ে মালিকের আল্টিমেটামের বিষয়টি তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ হয়। পরে বিষয়টি আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারমিতা রায়। আদালত স্বপ্রণোদিত রুলসহ এক আদেশে বলেন, কেন ওই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না- রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ঘোষিত আদেশে বলা হয়েছে- এলাকাটি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলে বাগান মালিক ও বাগানের ইজারাদারের ক্ষতির সম্ভাব্য পরিমাণ নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে রাজশাহী জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ নিয়ে জেলা প্রশাসন থেকে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতানকে আহবায়ক করে একটি কমিটি ও বনবিভাগ সহকারী বনসংরক্ষক মেহেদী হাসানকে আহবায়ক করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সদস্যরা পাখির বাসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮টি আমগাছ চিহ্নিত করে। তারা ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে। তাদের প্রস্তাবনার মধ্যে ছিল পাখি থাকাসাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, পাখিরা সব সময় একই জায়গায় বাসা বাঁধে না। কয়েক বছর পর তারা নতুন জায়গায় চলে যায়।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, পাখির বিষ্টায় স্থানীয় মানুষের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়- এ ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। পাখির অসুস্থতার ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিতে হবে; সর্বোপরি পাখি সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় লোকজনের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। তাদের উৎসাহিত করার জন্য সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করতে হবে ও উপহারসামগ্রী দিতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877